একদিকে জীবন বাঁচানোর যুদ্ধ অন্যদিকে মামলা চালানো। রীতিমত হিমশিম খাওয়ার অবস্থা। তবুও সন্তানদের মুখে আধপেটা খাবার তুলে দিয়েই মামলার খরচ জোগাতে দৌড় ঝাঁপ। সাথে বাইরের লোকেদের নানা কটু কথা। সবকিছু সহ্য করে এগিয়ে চলেছেন। ১৯৯০ সাল, সংসার চলছে কচ্ছপ গতিতে, মামলা চলছে মামলার গতিতে। নেই কোন অগ্রগতি। আশা আছে, তবে নিশ্চয়তা নেই। তবুও তিনি হাল ছাড়েন নি। শত কষ্টের মাঝেও পার করছেন দিন। ২০০০ সাল, মামলা বহুদিন ধরে চলছে। কোন অগ্রগতি নেই। সন্তানদের এক এক করে বিয়ে দিয়েছেন। বয়স বাড়ছে, শক্তি কমছে, কিন্তু কমেনি শত্রুদের বিরুদ্ধে সত্যের লড়াইয়ের ইচ্ছা। একাই এগিয়ে চলেছেন। আশা ও স্বপ্ন একটাই, একদিন সব ফিরে পাবেন। অভাবের সংসারে লোক সংখ্যা বেড়েছে। তবুও তিনি একা।
২০০৭ সাল, দীর্ঘ দিনের অপেক্ষার পর, সহ্য ও আশার আকাশে তারার আলো। আদালতের রায় হলো। তার স্বামীর বেদখল হওয়া জমি তাকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর সফলতা এলো। জয় হলো সত্যের। তিনি উঠলেন তার নিজ সিংহাসনে। তিনি হাসলেন বিজয়ের হাসি। সাথে দেখিয়ে দিলেন টাকা, ক্ষমতা, জনবল কিছু না থাকলেও শুধু ইচ্ছা, পরিশ্রম, সততা, একনিষ্ঠতা থাকলে মানুষ অসম্ভবকেও সম্ভব করতে পারে।
তিনি পেরেছেন। সন্তানদের মানুষ করেছেন। তিনি পারেন, কারন তিনি প্রীতি। ইতিহাস স্বাক্ষী আছে, প্রীতিলতা হারেনি। ইতিহাস আবারও স্বাক্ষী প্রীতি রানী হারেনি।
প্রীতি রানী ঘোষ, এই মহীয়সী নারী ২০২১ সালের ১৮ নভেম্বর, পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান না ফেরার দেশে। কিন্তু মরেও তিনি বেঁচে থাকবেন সহায় সম্বলহীন নারীদের মাঝে শক্তি হয়ে। আজ ৭ নভেম্বর এই মহীয়সী নারীর প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী। তার প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা। আমি প্রীতিলতাকে দেখিনি, আমি প্রীতি রানীকে দেখেছি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন